যখন একজন মুসলিম পুরুষ বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজেন তখন কোন জিনিস গুলো তার মনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়?
একটা কঠিন প্রশ্ন। কারণ যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা সেটা হল রাসুলুল্লাহ (সা:) যেটা শিখিয়ে দিয়েছেন, যেমন একজন ধার্মিক নারী।
কিন্তু এ সমাজে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমরা মিডিয়াতে যেভাবে নারীকে উপস্থাপিত হতে দেখি, সেটা আমাদের জীবন সঙ্গী সংক্রান্ত চিন্তাগুলোকে প্রভাবিত করে। সুতরাং বাস্তবে প্রায় সব পুরুষই যখন তার জন্য একজন জীবন সঙ্গীকে খুঁজতে যান, তখন প্রথম যে জিনিসটি তাদের মাথায় আসে সেটা রাসুলুল্লাহ (সা:) যেটা আপনাকে শিখিয়ে দিয়েছেন সেটা অবশ্যই নয়। সুতরাং অবশ্যই আপনি যখন পার্টনার খোঁজেন তখন শারীরিক ভাবে একজন আকর্ষণীয় নারীকেই খোঁজেন। এটাই প্রথম যা আপনার মনে স্থান পায়।
আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে অন্য সবাই আকর্ষণীয় হিসেবে ভাবতে নাও পারে। কিন্তু আপনার চোখে তাঁকে শারীরিক ভাবে আকর্ষণীয় হিসেবে উপযুক্ত হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত পুরুষরা যা ই বলেন না কেন প্রায় সবাই সব কিছুর আগে শারীরিক সৌন্দর্যের দিকেই ঝুঁকে থাকেন।
কিন্তু আমি এটাকে খারাপ বলে মনে করি না। বরং আপনাকে অন্য বিষয়গুলোর প্রতিও গুরুত্বারোপ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে একজন পুরুষ যদি দশজন আকর্ষণীয় নারীকে দেখেন, তাহলে তাদের মধ্য থেকে তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর শিক্ষা অনুযায়ী উপযুক্ত জনকে বেছে নিতে হবে।
তার মানে, মূলত যদি কেউ সুন্দর হয় কেবল তখনই শুধু আপনি তার ধর্মীয় গুনাবলীর দিকে গুরুত্ব দিবেন?
(হাসি!) হ্যাঁ! পাগলামিই বটে তাই না?, না! আমি মনে করিনা যে এটা পাগলামি। আমি মনে করি এটাই স্বাভাবিক। অবশ্যই আপনি কিছু ধার্মিক নারীর মধ্য থেকে সবচেয়ে সুন্দরী একজন কে বেছে নিতে পারেন।
তবে সেটা কিন্তু ঘটে না, সাধারণত আমরা (মেয়েরা) চাই সবাইই (ছেলেরা) ধার্মিক হোক। কিন্তু অনেক ছেলেদের ক্ষেত্রে কি ঘটে? যখন তারা একজন সুন্দরী নারীকে দেখে তারা জাস্ট আশা করে যে মেয়েটি ধার্মিক হবে। যদি সে ধার্মিকতাকেই প্রাধান্য দেয়ার প্রতি মনস্থ করে, তবুও সুন্দরী নারীর সাক্ষাৎ তাকে তার স্ট্যান্ডার্ডটাকে (ধার্মিকতার দিক থেকে) কমিয়ে দেয়, সে ধার্মিকতার দিকটায় ছাড় দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। সে ভাবতে থাকে যে সে মেয়েটিকে রিলিজিয়াস বানিয়ে নিতে পারবে।
সুতরাং ধার্মিকতাটা যেহেতু এক ধরণের অদৃশ্যমান ব্যাপার সেহেতু আপনি কি এটা নিয়ে বড়জোর আশাই করতে পারেন?
না! কারণ ধার্মিকতাটা অদৃশ্য কোনও ব্যাপার নয়। আমি মনে করি এক দিক দিয়ে এটা অদৃশ্যমান ব্যাপারও বটে, যেমন একজন মানুষের হৃদয়ের অকৃত্রিমতা, এটা কিন্তু অদৃশ্য ব্যাপার। কিন্তু অনেক পুরুষই যেটা করতে চেষ্টা করেন সেটা হল, তারা ভাবেন যে একজন সুন্দরী নারী মোটামুটি ধার্মিক হলেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু তাদের জীবন অবশেষে একধরনের শূন্যতায় ভরে থাকে। তারা নিজদেরেকে বুঝায় “মেয়েটির মধ্যে সম্ভাবনা আছে” কিন্তু বাস্তবে সেটা আর ঘটে না, তখনি থমকে যান তারা পরিণত হন অতি কচলানো লেবুর মতো।
আসলে এটা হতে বাধ্য, কারণ তারা ধার্মিকতার ব্যাপারে আপোষ করেছেন এবং সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এখন তাদেরকে সেটার উপরই কাজ করতে হবে। অতি-কচলানো লেবুর সাথে চিনি মিশিয়ে তাকে সুমিষ্ট বানানোর প্রচেষ্টা। পুরুষের পুরুষত্ব বাচক অহংবোধ নিজের ভুল গুলো স্বীকার করার চাইতে তাকে নিজের পছন্দমত সিদ্ধ্যান্ত নিতে প্রভাবিত করবে।
কিন্তু আমরা যদি মুল প্রশ্নে ফিরে যাই, যে পুরুষরা আসলে কি চায়? সাধারণত আপনারা এমন নারী কে চান যে স্বাস্থ্য সচেতন এবং সে তার নিজের টেক কেয়ার করতে পারবে, যে তার শারীরিক অবয়বের প্রতি যত্নশীল হবে। আপনারা এমন কাউকে পছন্দ করবেন না যে দৃশ্যত কেয়ারই করে না কিছু। মানুষ তথা পুরুষ ও নারী উভয়েই স্বভাবতই দীর্ঘায়ুর প্রতি আসক্ত যাতে তারা সন্তান নিতে পারে এবং সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন করতে পারে।
নিচের প্রশ্নোত্তর গুলোতে পুরুষরা কি চায় তা ফুটে উঠেছে:
- আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলুন? আপনি একজন ধার্মিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে কি কি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
একজন সাথী… এমন একজন যিনি সংসারকে রাসুলুল্লাহর (স:) সুন্নাহর সাথে টিকিয়ে রাখবেন। কিন্তু সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে সম-মনষ্ক হওয়া ও ইমানের মৌলিক ভিত্তিটায় মিল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার বিয়ে এবং ভবিষ্যতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ-কর্মকে আপনি সেই ভিত্তিটা এখন এমন একটা প্রশ্ন করবো যা সম্পর্কে অধিকাংশ নারীরাই সচেতন: শারীরিক অন্তরঙ্গতা ও উপভোগ্যতার পাশাপাশি কোন জিনিসটিকে আপনি বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে অভূতপূর্ব যে জিনিসটি একজন পুরুষ চাইতে পারে তা হল স্ত্রীর সহচর্য, সুন্দর চরিত্র, এবং সঠিক ভাবে সন্তানাদিকে প্রতিপালন করা। একজন পুরুষ হিসেবে আপনি বাইরে কাজে যাবেন পরিবার চালানোর জন্য। সুতরাং যখন আপনি কাজের জন্য বাইরে থাকেন তখন ঘরে এমন এক নারী থাকা যে কিনা আপনার সন্তানাদিকে শিক্ষা দিচ্ছে এবং প্রতিপালন করছে এটা সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া গুলোর মধ্য অন্যতম।
- সহচর্য বলতে আপনি কি বুঝেন?
এটা এমন, যে যখন আপনার একজন ভাই কিংবা বোন থাকে, যার সাথে আপনি বেড়ে উঠেন। এমনই একটা কিছু। যে সব সময় পাশে থাকে। আপনি যা কিছু করেন সে সবই পছন্দ করবে এমন না, কিন্তু আপনি যা করেন তা সে উপভোগ করে, কারণ একটাই, সেটা হল যে আপনি এটা করছেন। যেমন আমার স্ত্রী কিছু খাবার খেতে শুরু করার আগে আমি সেগুলো পছন্দ করতাম না। তাঁকে দেখে আমি সেগুলো পছন্দ করতে শুরু করি, আমি চিন্তা করলাম ট্রাই করে দেখিনা কেন? এটাই সত্যিকার সহচর্যের সবচেয়ে উপভোগ্য দিক। এমন কিছু জিনিস কে পছন্দ করা, কারণ আপনার প্রিয়জন সেটা পছন্দ করে। যখন আপনি আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে কিছু করেন তখন কিছু কাজ যেমন একসাথে খাওয়া এমনকি একসাথে রান্না করাটাও অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠে।
- তাহলে নারীর ব্যক্তিগত অর্জনের ব্যাপারটা কেমন? এটা কি পুরুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ?
এই ব্যাপারটিতে পুরুষদের মধ্যে সব রকমের মতামতই পাওয়া যায়। কেউ চায় এমন নারী যার অর্জন (শিক্ষা, প্রফেশনাল এচিভমেন্ট ইত্যাদি) খুব ভালো। কেউ এমন নারী চায় যাকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কেউ চায় এমন নারী যার কোনও উচ্চাভিলাষ (ambitions) নেই। এটা হচ্ছে পুরুষের দুর্বলতা, কারণ রাসুলুল্লাহ (স) পরিবারে নিয়ন্ত্রক ছিলেন না এবং তার স্ত্রীগন ছিলেন খুবই উচ্চাভিলাষী (ambitious)। যদি আমরা হযরত আয়িশা (রা) ও খাদিজা (রা) এর দিকে তাকাই আমরা তাদের মধ্যে উচ্চাভিলাষের অভাব দেখি না। তারা খুবই বুদ্ধিমতী ও সুদক্ষ ছিলেন।
- কিন্তু কেন পুরুষরা উচ্চাভিলাষহীন স্ত্রী চাইবে?
সম্ভবত তারা এটা করে নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই মানসিকতাটা বুঝতে পারি না। আমার বেলায়, আমি চাই যখন আমি ঘরে ফিরি তখন আমার স্ত্রী ঘরে থাকবে আমাকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য। সে আমার দেখ-ভাল করে এটা আমি ভালবাসি এবং এটা পুরুষের অন্তরাত্মায় প্রশান্তি এনে দেয়। এটা আমাকে শক্তি যোগায় যে আমার স্ত্রী আমাকে সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং সেটা প্রকাশ্য কাজের মাধ্যমে ব্যক্ত করছে। এটা পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্মানের সৃষ্টি করে।
- আপনি কি মনে করেন যে আপনার স্ত্রী তার অর্জনের/সফলতা/ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে কি করলো বা না করলো সেটায় আসলে তেমন কিছুই আসে যায় না? তবে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল সে আপনার জন্য কি করছে সেটা?
না, সবার জন্য ব্যাপারটা সমান না। অনেকে তার স্ত্রীর সফলতা বা অর্জন দেখে খুশি হয় এবং তারা খুব হেল্পিং হয়। বিশেষ করে তার স্ত্রী যেটা করছে সেটা যদি মুসলিম কমিউনিটির জন্য ভালো কিছু হয়।
- আপনি যখন অফিস বা কাজ শেষে ফিরেন এবং ঘরে প্রবেশ করার জন্য দরজা খোলার মুহূর্তে কোন জিনিসটির জন্য আপনি মুখিয়ে থাকেন?
পুরুষেরা সাধারণত উত্তর দেয় যে “ঘরে ফিরে আমি হাসিমুখে সম্ভাষণ পেতে পছন্দ করি। আমি এসে ঘরটা গোছালো ও সুন্দর ঘ্রানময় দেখতে পছন্দ করি। আমি দেখতে চাই আমার স্ত্রীকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, আমি তার মধ্যে সুন্দর পারফিউমের গন্ধ পেতে চাই। আমি ঘরে ফিরে রিল্যাক্সে থাকতে চাই। আমি ঘরে ফিরে আমার স্ত্রীকে কুরআন পাঠরত দেখতে পছন্দ করি। ঘরে ফিরে আমার স্ত্রীকে তার পছন্দের কাজে নিমগ্ন দেখতে পছন্দ করি।”
- নারীর ভূমিকার ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন?
অনেকেই এটা বলতে বুঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং রান্না-বান্নাকে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, নারীর ভূমিকা বলতে আমি কখনও এমনটি ভাবিনি। তবে অবশ্যই একজন ভালো নারী রান্নাটা ভাল করবে। আপনাকে সুখী করতে সে স্বাস্থ্যকর খাবার রান্না করবে। কিন্তু আমি মনে করি না যে নারীর ভূমিকার জায়গাটা এটাই। আমি নারীকে সঙ্গী হিসেবেই দেখি। ব্যক্তিগতভাবে আমি রান্না করা পছন্দ করি। আমি এটা খুবই উপভোগ করি তাই আমিও রান্না করি।
- আপনার মতে বিয়ের ক্ষেত্রে নারীদের সবচেয়ে বড় ভুলটি কি বলে আপনি মনে করেন?
আসলে আমি মনে করি এটা এভাবে বলা গুরুত্বপূর্ণ যে “মানুষ ( শুধু নারী নয়) সবচেয়ে বড় যে ভুলটি করে”, এর মধ্যে নারীও অন্তর্ভুক্ত। আমি মনে করি ভুলটা হল আমরা অপরজনকে এমন ভাবে দেখি যেন সে একই জেন্ডারের মানুষ।
পুরুষরা নারীদেরকে নিজেদের মতো করে ভাবতে আশা করে। পুরুষদের মধ্যে সোজাসাপ্টা মুল কথায় আসার একটা প্রবণতা কাজ করে অন্যদিকে মেয়েরা চায় তার কথাগুলো কেউ শুনুক। এটা সবারই জানা। ছেলেরা সবসময় মেয়েরা কথা বলার সময় মন্তব্য করে বসে, যেখানে তাদের শুধু শুনে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু তারা সবকিছুর সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে এবং প্রত্যেকটি সমস্যাকেই আক্রমণ করে থাকে।
- নারীদের ভুল সম্পর্কে কি বলবেন?
জাস্ট পুরুষের বিপরীতটা। নারীরা অন্যান্য নারীদের ব্যাপারে যেভাবে চিন্তা করে পুরুষদের সম্পর্কেও সেভাবেই চিন্তা করে। আর পুরুষরাও যেভাবে অন্যান্য পুরুষদের ব্যাপারে চিন্তা করে সেভাবেই নারীদের ব্যাপারে চিন্তা করে। কারণ আমরা শুধু আমাদের ব্যাপারেই অভিজ্ঞ, যেমন মেয়েরা মেয়েদের ব্যাপারেই শুধু অভিজ্ঞ। আসলে মেয়েদের উচিৎ ছেলেদের ক্ষেত্রে ছেলেদের জায়গা হতে চিন্তা করা আর মেয়েদের উচিত ছেলেদের ক্ষেত্রে ছেলেদের জায়গা থেকে চিন্তা করা।